বৈশ্বিক উষ্ণতা কেন বাড়ছে!
বৈশ্বিক উষ্ণতা কল্পনাতীত হারে বেড়ে যাচ্ছে। এর পিছনে গূঢ় রহস্য বলতে কিছু নেই, এই অর্জন মানুষেরই এবং এর ফল মানুষই ভোগ করছে এবং করবে। আমরা আধুনিক সভ্যতায় শিল্প বিপ্লবের যুগে পৌছে গেছি, বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি কল কারখানা, যান্ত্রিক ব্যবহারে মরিয়া হয়ে গিয়েছি। এই সভ্যতাই একদিন মানব জাতিকে বিলুপ্ত করে দিবে। তখন এই আধুনিক সভ্যতা হয়ত বিনগ্রহীরা এসে চালাবে। যে হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এই বৃদ্ধির ধারা চলতে থাকলে তার প্রভাব মোকাবেলা করা মানুষের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপরও তাপ বৃদ্ধির ভয়ানক প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে। সৃষ্টি হবে চরম তাবদাহ। বৈশ্বিক উৎপাদন ও খাদ্য মজুত কমে যাবে। প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়বে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গলতে থাকবে মেরু অঞ্চলের জমাট বরফ। এতে অনেক দ্বীপ ও উপকূলীয় অঞ্চল তলিয়ে যাবে। অনেক অঞ্চল অনাবৃষ্টি ও তাপদাহের কারণে মরুভূমিতে পরিণত হবে। মানুষের জীবনযাপন হয়ে পড়বে চরম দুর্বিষহ।
তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত চরম পরিস্থিতির ফলে অস্থির ও উষ্ণ পৃথিবীতে মানুষ, উদ্ভিদ ও জীবের বসবাস করাটাই কঠিন ও কষ্টকর হয়ে যাবে। কারণ, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের শীর্ষবিন্দু স্পর্শ করলে জলবায়ুর অভিযোজন সম্ভব হবে না। মানুষ ও প্রাণসমূহ চরম প্রাকৃতিক বৈরিতার মুখে স্বাভাবিক অভিযোজনের ধারা থেকে বিরূপ পরিস্থিতিতে ছিটকে পড়বে। যা থেকে উদ্ধার পেয়ে প্রাণধারণ করাই প্রচণ্ড কষ্টকর ও চ্যালেঞ্জিং হবে মানুষ, গাছপালা ও জীব-জন্তু-কীট-পতঙ্গের জন্য।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সম্পাদিত প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বলা হয়েছিল, বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। কোনোভাবেই যেন পৃথিবীর তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম না করে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এরও আগে ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত ‘কিয়োটো প্রটোকল’-এও বৈশ্বিক তাপমাত্রা সীমিত রাখার অঙ্গীকার করা হয়।
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর পক্ষ থেকে যথাযথ সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ না ঘটায় অবনতিশীল পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি। বিশেষত উন্নত দেশগুলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকে মানুষ ও প্রকৃতির চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে অবাধে জ্বালানি পোড়াচ্ছে। নতুন নতুন কল-কারখানা তৈরি হচ্ছে পরিবেশগত প্রতিক্রিয়ার কথা না ভেবেই। যান্ত্রিকীকরণের মাত্রা ও হার এতোটাই প্রবল হয়েছে যে, বায়ু ও পরিবেশ দুষণ ও বিনষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুরো পৃথিবী অগ্নিগর্ভ ও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। গাছ-পালা কর্তন, নদী-খাল ভরাটের মতো কাজও অবাধে চলছে প্রবৃদ্ধি অর্জনের তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে। উন্নতি, অগ্রগতি, প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাতাল লড়াই থামানো না গেলে এবং এক্ষেত্রে পরিবেশ-বান্ধব নীতি ও কর্মসূচি গৃহীত না হলে অচিরেই যে তাবৎ পৃথিবী অসহনীয় অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হবে, সে আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট অনেকের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে না। পরিবেশমুখী মনোভাব ও জীবনবাদী বোধোদয় ছাড়া পৃথিবীর তাপমাত্রা সহনীয় স্তরে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। দিন দিন আবহাওয়ার মারাত্মক বিপর্য ঘটছে এতে আবহাওয়াবিদগনের কোন মাথা ব্যাথা নাই, নাই কোন স্বক্রিয় পদক্ষেপ।
কোন ভুল ত্রুটি হলে কমেন্টে জানাবেন।