ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কি? ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কি ছোঁয়াচে? এই রোগের উপসর্গ কী কী?
মিউকরমাইসিটিস নামক ছত্রাক থেকে মিউকরমাইকোসিস হয়ে থাকে, যাকে আমরা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বলে চিনি। মূলত বাতাস, নোংরা পানি, মাটি বা গোবর থেকে নিঃশ্বাসের সাথে অথবা ত্বকের কোনো ক্ষত দিয়ে এটা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। মূলত দুর্বল শরীরেই বাসা বাঁধে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস৷আমাদের নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এই ফাঙ্গাস দ্বারা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কম।কিন্তু বিশেষ কিছু রোগী আছেন যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে দূর্বল। যেমনঃ
১.ডায়াবেটিস রোগী।
২.ক্যান্সার রোগী।
৩.করোনা রোগ।
৪.স্টেরয়েড ব্যবহারকারী।
আসুন জেনে নেওয়া যাক এই ভাইরাস কিভাবে মানব দেহে আক্রমন করে!
১.কী এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস?
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকোরমায়কোসিস একটি বিরল ফাঙ্গাল সংক্রমণ। এটি শরীরে দেখা দিলে ৫৪শতাংশ রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানা গিয়েছে, কোভিট সংক্রামক রোগী সুস্থ হয়ে উঠলেও তাঁর রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায়। তখনই এই জাতীয় ছত্রাক শরীরে বাসা বাঁধে। যে সব রোগীকে দীর্ঘদিন আইসিইউ-তে রেখে চিকিৎসা করা হয়েছে এবং যাঁদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবিটিস রয়েছে, তাঁদের শরীরের এই জাতীয় সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে।
২.এই রোগের উপসর্গগুলি কী কী?
আপনার যদি এই ছত্রাকের সংক্রমণ হয় তবে গালে ব্যথা হতে পারে। এটি গালের একপাশে বা উভয় দিকেই হতে পারে, এটিই এই ছত্রাকের সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণ। পরে, এই সংক্রমণের কারণে, মুখের ক্ষতও তৈরি হতে পারে। এগুলি ছাড়াও এই সংক্রমণ ত্বক সম্পর্কিত আরও অনেক সমস্যার জন্ম দিতে পারে। চোখ প্রভাবিত করে এই ফাঙ্গাস
বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে, ফাঙ্গাল সংক্রমণ চোখকেও প্রভাবিত করতে পারে। এ কারণে চোখে ফোলাভাব এবং দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া চোখের লালভাবও এই ছত্রাকের সংক্রমণের অন্যতম প্রধান লক্ষণ।
৩.কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকোরমাইকোসিস?
এই রোগ ছোঁয়াচে নয় ফলে এটি সরাসরি একজনের দেহ থেকে অন্যের দেহে যেতে পারে না৷ একমাত্র এই ধরণের ছত্রাকের (Fungus) ছোঁয়ায় এই রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে৷ ক্ষতি করতে পারে ফুসফুস বা সাইনাস৷ ত্বকের সমস্যা থেকে শুরু করে চোখের সমস্যা, সবটাই ঘটতে পারে। রোগীর শরীরের অবস্থা, এবং কতটা জোরাল ফাঙ্গাস, তার উপর নির্ভর করে এর মৃত্যুর হার৷ বহু করোনা রোগীর অবস্থা অবনতি হওয়ার পিছনে রয়েছে এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস।
৪.পরামর্শ
এই রোগের লক্ষণ প্রকাশের সাথে সাথে ডাক্তারের চিকিৎসা নিলে এই রোগ ভালো হয়ে যায়। এছাড়া ভিটামিন সি, ডি, ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, সব সময় পরিষ্কার মাস্ক পড়া, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, শারীরিক ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম সর্বোপরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ালে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
আজ বারডেম এর Dr Firoj Amin, Endocrinologist ‘র লেখাটি শেয়ার করলাম। অচিরেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে সহজ করে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে রইলো।
ডায়াবেটিস নাই, যাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা ঠিক আছে, ক্যান্সার নাই, তাদের ব্ল্যাক fungus হওয়ার সুযোগ নাই বললেই চলে। এটা ছোঁয়াছে রোগ না।
যাদের ডায়াবেটিস আছে, নিয়ন্ত্রণ এ রাখুন। শুধু খালি পেটে গ্লুকোজ কম মানেই ভালো গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ না। গড় ডায়াবেটিস ৭% এর নীচে রাখতে হবে। দিনের বিভিন্ন সময়ে গ্লুকোজ মাপুন। গ্লুকোমিটার কিনে নিন। আপনার গ্লুকোজ খালি পেটে, দুপুরে খাওয়ার আগে, রাতে খাওয়ার আগে ৬ থেকে ৭, আর সকাল, দুপুর, রাতে খাওয়ার দু ঘন্টা পর ১০ এর নীচে রাখুন। তাহলে বলা যাবে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে। মুখে খাওয়ার ওষুধে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে না হলে ইনসুলিন শুরু করুন।
ভয় পেয়ে আরেক জন কে ভয় না দেখিয়ে নিজের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখুন, মাস্ক পড়ে বাসার থেকে বের হবেন। পুরোনো মাস্ক ব্যবহার করবেন না।
নতুন কোনো মেডিসিনে গ্লুকোজ বেড়ে যায় কিনা চেক করুন।
করণীয় কী?
নিয়মকানুন মেনে চললে অনেকটাই দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন। যেমনঃ
ক) ডায়াবেটিস-প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
খ) পরিষ্কার মাস্ক পরুন।
গ) চিকিৎসকের পরামর্শব্যতীত কোনো antibiotic, antifungal, antimicrobial, steroid অথবা অন্য কোনো ঔষধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
ঘ) পুরাতন কাপড় ও ২সপ্তাহের বেশি পুরাতন মাস্ক পরা থেকে বিরত থাকুন।।
ঙ) লম্বা কাপড় চোপড় পরুন।
চ) জামা কাপড় সাবান ও ডেটল দিয়ে ঘর পরিস্কার রাখুন।সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলুন।
মনে রাখতে হবে, এটি কোনো নতুন, ছোঁয়াচে, বিরল বা দুরারোগ্য রোগ নয়। সুতরাং আতঙ্কিত হয়ে গুজবে কান দিবেন না। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসায় এই রোগ ভালো হবার সম্ভাবনা বেশি।
ধন্যবাদ!