বিখ্যাত কমিডিয়ান চার্লি চ্যাপলিনের লাশ চুরির রহস্য!
চার্লি চ্যাপলিন! নামটা শুনলেই নিজের অজান্তেই হেসে উঠি সবাই। কিন্তু জানেন কি মৃত্যুর পর এই মানুষটারই লাশ চুরি হয়ে গিয়েছিল। এমন কি চোরেরা রীতিমতো তাঁর পরিবারের কাছে চেয়ে বসেছিল মুক্তিপণও! কি অবাক হচ্ছেন? ঘটনাটি ১৯৭৮ সালের।
সেই বছর মার্চের ১ তারিখ সুইজারল্যান্ডে বসবাসরত চার্লি চ্যাপলিনের বিধবা স্ত্রী ‘ওনার’ কাছে স্থানীয় পুলিশের একটি ফোন কল আসে। বিব্রত পুলিশ কর্মকর্তা তাকে জানান- আপনার স্বামীর কবর খুঁড়ে কারা যেন তাঁর মৃতদেহ চুরি করে নিয়ে গেছে! বিখ্যাত আমেরিকান নাট্যকার ইউজিন ও’নিলের মেয়ে, ওনাকে চ্যাপলিন যখন বিয়ে করেন, তখন ওনার বয়স ছিল মাত্র ১৮, আর চ্যাপলিনের ৫৪। ওনা ছিলেন চ্যাপলিনের চতুর্থ স্ত্রী। চ্যাপলিনকে কমিউনিস্ট সন্দেহে আমেরিকায় ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকে চ্যাপলিন- ওনা দম্পতি তাদের ৮ সন্তান নিয়ে সুইজারল্যান্ডে বসবাস করতেন। নির্বাক চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন মৃত্যুবরন করেছিলেন সুইজারল্যান্ডে তাঁর নিজের বাড়িতেই, ১৯৭৭ সালে ক্রিসমাস ডে’তে। আর তাকে সমাহিত করা হয়েছিল জেনেভা লেকের তীরে একটি গ্রামে, ঠিক তার বাড়ির পাশেই একটি কবরস্থানে। কিন্তু দুই মাসের মধ্যেই তার মৃত দেহ সেই কবরস্থান থেকে গায়েব হয়ে যায়। আর চ্যাপলিনের সদ্য বিধবা স্ত্রি ওনা কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাশ চোরেরা তাকে ফোন করে ৬ লাখ ডলার চাঁদা দাবি করে বসে।
তারা বলেছিল- যদি এই অর্থ ওনা তাদের দিয়ে দেন, তবেই চ্যাপলিনের মৃত দেহ ফিরিয়ে দিবে। কিন্তু মৃত দেহ চুরির এই ঘটনায় ওনা তেমন একটা উদ্বেগ দেখাননি। কারণ তিনি জানতেন, এমন মোটা অঙ্কের ডলার দিয়ে মৃত দেহ ফিরিয়ে আনাকে তার স্বামী নিজেই কখনো সমর্থন করতেন না। বরং এরকম কিছু ঘটলে চ্যাপলিনের কাছে ব্যাপারটা বেশ হাস্যকরই ঠেকতো! মৃত দেহ চোরেরা যখন দেখলো কাজ হচ্ছে না, তখন তারা চ্যাপলিনের ছোট দুই সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এবার আর পুলিশের সাহায্য নেওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিল না ওনার। চোরদের ধরতে পুলিশও শুরু করে দেয় ব্যাপক অভিযান। এমনকি মৃত দেহ চুরির ঘটনার পর পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত চ্যাপলিনের বাড়ির টেলিফোন ট্যাপ করে রেখেছিল পুলিশ। আর গোটা শহর জুড়ে ছিড়িয়ে- ছিটিয়ে থাকা প্রায় ২০০শ ফোনবুথের সব গুলোর উপর নজর রাখা শুরু করেছিল গোয়েন্দারা। পুলিশের এই পরিকল্পনা কাজও করেছিল।
যখন মৃত দেহেরে ব্যাপারে চ্যাপলিনের বাসায় ফোন আসে, তখন সাথে সাথেই চোরদের আটক করে ফেলেন তারা। সেই চোর দু’জন ছিলেন বুলগারিয়ান আধিবাসী ভার্দাস এবং গাভেন নামক দুই ম্যাকানিক। মূলত সুইজারল্যান্ডে অভিবাসী হিসাবে থাকার সময়টায় নিজেদের আর্থিক সঙ্কট কাটাতেই তারা এই অভিনব ফন্দি এটেছিল। অবশ্য তারা চ্যাপলিনের মৃত দেহ খুব বেশি দূর নিয়ে যেতে পারেনি। কাছেই একটা ভুট্টা ক্ষেতে লোকিয়ে রেখেছিল। পরে সেখান থেকে চ্যাপলিনের মৃতদেহ তুলে এনে আবার তাকে মাটি চাপা দেওয়া হয়। এবার অবশ্য তার পরিবার আগের মতো ভুল করেননি, কবরটাকে কংক্রিট দিয়ে ভালোমতো বাঁধাই করে দেয়া হয়। পরে অবশ্য জানা যায় ইতালিয়ান একটি পত্রিকায় প্রকাশিত একই রকম আরেকটি ঘটনা তাদের কে এই মৃত দেহ চুরির কাজে উৎসাহিত করেছিল।
লাশ চুরির দায়ে আদালত ভার্দাস এবং গানেভ দুজনকেই বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করেছিল। তবে তারা দুজনেই তাদের এই অপকর্মের জন্য পরে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। তারা অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চেয়ে চিঠিও লিখেছিলেন ওনার কাছে। এমন কি তাদের একজনের স্ত্রীও ওনার কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন। আর সেই চিঠির জবাবে ওনা লিখেছিলেন….. যা হবার হয়েছে সব ভুলে যাও। আমিও ভুলে গিয়েছি এবং তোমাদের কেউ ক্ষমা করে দিয়েছি!
তো এই ছিল আজকের আর্টিকেল, যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে নিচে কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন!.
ধন্যবাদ!
Good
Good
Pingback: মধু কেন খাবেন? মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা! - Nitbaaz
Pingback: মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা! - Nitbaaz