দুইটি পিলারের উপর অবস্থিত প্ল্যাটফর্ম সেটাই একটা দেশ!
‘সিল্যান্ড’ এমন একটা দেশ যার মােট জনসংখ্যা মাত্র ২৭ জন। এই দেশের ইতিহাস আশ্চর্য হওয়ার মতাে। শুধু তাই নয়, দেশটির রয়েছে নিজস্ব পতাকা, রাজধানী, পাসপাের্ট, মুদ্রা সবই। ক্ষুদ্রতম এ দেশটির নাম ‘প্রিন্সিপালিটি অব সিল্যান্ড’। সংক্ষেপে এটিকে বলা হয় ‘সিল্যান্ড’। ক্ষুদ্রতম এই দেশটির মােট আয়তন ৫৫০ স্কয়ার মিটার। ইংল্যান্ডের উত্তর সাগরে এই রাষ্ট্রটির অবস্থান। দেশটির একটি রাজধানীও রয়েছে। দেশটির রাজধানীর নাম ‘এইচ এম ফোর্ট রাফস’। দেশটিতে ইংরেজি ভাষা প্রচলিত এবং মুদ্রার নাম সিল্যান্ড ডলার। তবে বাইরের কোনাে দেশে এই মুদ্রা চলে না। ইন্টারনেটে সিল্যান্ডের নিজস্ব একটি ওয়েবসাইটও রয়েছে। সেখানে সিল্যান্ডের নানা স্মারক ডাকটিকিট, মুদ্রা ইত্যাদি কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়াও আপনি চাইলে সিল্যান্ডের লর্ড, ব্যারন, কাউন্ট প্রভৃতি পদবী কিনতে পারবেন। সেই সাথে সিল্যান্ডের পাসপাের্ট করে চাইলে ঘুরেও আসতে পারবেন দেশটি থেকে। আমরা সবাই সাধারণত বিশ্বের সবচেয়ে ছােট দেশ হিসেবে ভ্যাটিকান সিটিকেই চিনি। কিন্তু এই দেশটিকে বিশ্বের অন্য দেশগুলাে এখনাে স্বীকৃতি না দিলেও এরা নিজেদেরকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ বা মাইক্রোনেশন (ক্ষুদ্ররাষ্ট্র) হিসেবেই দাবি করে। আর শুধু তা-ই নয়, তাদের দাবি অনুসারে, এটিই বিশ্বের সবচেয়ে ছােট দেশ। সিল্যান্ডের আশ্চর্যজনক সকল তথ্য জানার পূর্বে আমাদের জানতে হবে যে, আটলান্টিক মহাসাগরে স্টিলের দুইটি পিলারের উপর মাত্র চার-পাঁচ রুমের এই প্ল্যাটফর্মটা একটা স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ কিভাবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আমারা যে সকল মেথডের উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রকে রাষ্ট্র হিসেবে ডিফাইন করি বা একটা রাষ্ট্র আসলেই রাষ্ট্র কিনা, সেগুলাে থেকে গুরুত্বপূর্ণ দুইটা মেথড দিয়ে সিল্যান্ডকে ডিফাইন করার চেষ্টা করবাে-
*The Montevideo Convention* ১৯৩৩ সালে রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও অধিকারের উপর একটা কনভেনশন হয় যেটা The Montevideo Convention নামে পরিচিত। এখানে বলা হয়েছিলাে রাষ্ট্রের চারটা কোয়ালিশন থাকতে হবে;
(a) A permanent population – সিল্যান্ডে তিনজন স্থায়ী নাগরিক রয়েছে।
(b) A defined territory – সিল্যান্ডের ৫৫০ স্কয়ার মিটারের নির্দিষ্ট ভূখণ্ড রয়েছে।
(C) Government – সরকার হিসেবে একজন প্রিন্স রয়েছে, নাম মাইকেল বেটস।
(d) Capacity to enter into relations with other nations – কিছু রাষ্ট্রের সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে। উপরে উল্লেখিত চারটা কোয়ালিশনই সিল্যান্ডের রয়েছে। তাই সিল্যান্ড একটা রাষ্ট্র। *Constitutive Theory of Statehood* এই থিউরি অনুসারে একটা রাষ্ট্র তখনই রাষ্ট্র হবে যদি বিশ্বের অন্য স্বাধীন রাষ্ট্রগুলাে এটাকে রাষ্ট্র মনে করে বা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। (A country is if other countries think that country is a country) এই থিউরি অনুসারে যেহেতু পৃথিবীর স্বাধীন দেশগুলাে এখনাে সিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেয় নি তাই সিল্যান্ডকে রাষ্ট্র বলা যাবে না।অন্যদিকে বিশ্বের কোন দেশ এটাকে অফিসিয়ালি একটা দেশ হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও এখন অবধি কোনাে দেশ সিল্যান্ডের বিরােধিতা করেনি। সিল্যান্ডের ইতিহাস সবাইকে আবিভূত করে। তাই চলুন আজকে জেনে নিই বিশ্বের সবচেয়ে ছােট দেশ সিল্যান্ডের অনন্য ইতিহাস। (নােটঃ নিচের দীর্ঘ ইতিহাসটি ‘The Wall’ জার্নাল থেকে কিছুটা পরিমার্জিত করে তুলে ধরা হয়েছে) ইংল্যান্ডের এসেক্সকে ছুঁয়ে থাকা অ্যাটলান্টিকের জলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তৈরি করা হয়েছিল অসংখ্য দুর্গ। সমুদ্রের ভেতর দুটি পিলারের ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা দুর্গগুলি তৈরি করা হয়েছিল শত্রুপক্ষের বােমারু বিমানকে গুলি করে নামানাে ও সমুদ্রের জলে মাইন পাতার জন্য। বিশ্বযুদ্ধের পর পরিত্যক্ত হয়ে গিয়েছিল দুর্গগুলি। হয়ে উঠেছিল অপরাধীদের আখড়া। ষাটের দশকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দুর্গগুলিতে চালু করেছিলেন অবৈধ রেডিও স্টেশন। ইংল্যান্ডের যুবসম্প্রদায়কে পপ মিউজিক শুনিয়ে বিজ্ঞাপন থেকে বিপুল মুনাফা করত রেডিও স্টেশনগুলি।
মেজর রয় বেটসঃ
মেজর রয় বেটস ছিলেন ব্রিটিশ সেনা অফিসার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লড়াই করেছিলেন ইতালি ও আফ্রিকাতে। বিশ্বযুদ্ধের পর মেজর বেটস ঠিক করেছিলেন যে, তাঁর সব ব্যবসা গুটিয়ে রেডিও স্টেশন বানাবেন। তাই মেজর বেটস , ১৯৬৪ সালে দখল করে নিয়েছিলেন নক জন’ নামে একটি সামুদ্রিক দুর্গ। সেখানে তিনি চালু করেছিলেন অবৈধ রেডিও স্টেশন ‘রেডিও সাসেক্স ‘। ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল রেডিও সাসেক্স’ দুর্গটির দিকে নজর ছিল অনান্য অবৈধ রেডিও স্টেশনগুলির। তারা প্রায় হামলা চালাতাে মেজর বেটসের দুর্গে। গুলি ছুঁড়ে মেজর বেটস সেই সব হামলা প্রতিহত করতেন। একসময় তাঁর নজর পড়েছিল, সমুদ্রের আরও ভেতরে থাকা আর একটি দুর্গের ওপর যার নাম ছিলাে রাফস টাওয়ার। দখল করেছিলেন রাফস টাওয়ার দুর্গঃ সাফোক কাউন্টি থেকে ১২ কিলােমিটার দূরে, সমুদ্রের বুকে ছিল এই ‘রাফস টাওয়ার’ নামে আর একটি দুর্গ। বিশ্বযুদ্ধের সময় সময় দুর্গটিতে থাকত শতাধিক ব্রিটিশ সেনা। ব্রিটেনের রয়াল নেভি, ১৯৫৬ সালে দুর্গটিকে পরিত্যক্ত বলে ঘােষণা করেছিল। মেজর বেটস বন্দুকের তেজে দখলকারীদের হঠিয়ে ১৯৬৬ সালে দখল করে নিয়েছিলেন রাফস টাওয়ার দুর্গটি। রাফস টাওয়ারে মেজর বেটস মজুত করেছিলেন রেডিও স্টেশনের যন্ত্রপাতি ও প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র। সাসেক্স থেকে পরিবারকে নিয়ে এসেছিলেন রাফস টাওয়ারে। স্ত্রী জোয়ান, মেয়ে পেনি ও চোদ্দ বছরের ছেলে মাইকেলকে বন্দুক ছোঁড়া ও মলােটভ ককটেল বােমা বানানাে শিখিয়েছিলেন। কারণ অনান্য অবৈধ রেডিও স্টেশনের লােকেরা রাফস টাওয়ার দখলের চেষ্টায় ছিল। কিছুদিনের মধ্যেই ব্রিটেনের ওয়ারলেস টেলিগ্রাফি আইন ভাঙায় মেজর বেটসকে ফাইন করা হয়েছিল।তারপর রেডিও স্টেশনটি বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর বেটস। সেই রাফস টাওয়ার হয়েছিল স্বাধীন রাষ্ট্রঃ ইংল্যান্ডের ওপর ক্ষোভে ১৯৬৭ সালে এক অভুতপূর্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মেজর বেটস। তার স্ত্রী জোয়ানের জন্মদিন ছিল ২ সেপ্টেম্বর। ওই দিন নিজের নকশা করা পতাকা স্ত্রী জোয়ানকে দিয়ে উত্তোলন করিয়ে রাফস টাওয়ারকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘােষণা করেছিলেন মেজর বেটস। পাঁচশাে বর্গমিটার এলাকা জুড়ে থাকা এই রাফস টাওয়ারের নাম দিয়েছিলেন প্রিন্সিপ্যালিটি অফ সিল্যান্ড। মেজর রয় বেটস হয়ে গিয়েছিলেন সেই দেশটির যুবরাজ বা প্রিন্স রয়। খবর পেয়ে অবৈধ রেডিও স্টেশন রেডিও ক্যারােলিন এর মালিক রাফস টাওয়ার দখল করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বেটস পরিবারের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে এঁটে উঠতে পারেননি।
ব্রিটেনের জলসীমায় আরও খুনােখুনির আশঙ্কাঃ
রাফস টাওয়ারের দিকে এগিয়ে গিয়েছিল ব্রিটেনের রয়াল নেভির যুদ্ধজাহাজ। দূর থেকে নেভির জাহাজকে আসতে দেখে জলে গুলি ছুঁড়েছিলেন মেজর বেটসের কিশাের পুত্র মাইকেল। নেভির জাহাজের দিকে গুলি ছোঁড়ার দায়ে মেজর বেটস ও পুত্র মাইকেলকে গ্রেফতার করে তােলা হয়েছিল ব্রিটিশ কোর্টে। মেজর বেটস কোর্টকে জানিয়েছিলেন রাফস টাওয়ার একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। ব্রিটেনের জলসীমার তিন মাইল বাইরে আছে তার দেশটি। মেজর বেটসের দাবার চালে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। মেজর বেটসের দাবী খতিয়ে দেখে কোর্ট বলেছিল যে ব্রিটেনের জলসীমার বাইরে ঘটা অপরাধের বিচার ব্রিটেনের কোর্ট করতে পারে না। সেই প্রথম সিলমােহর পড়েছিল সিল্যান্ডের স্বাধীনতায়। সাত বছর পর মেজর রয় বেটস ওরফে প্রিন্স রয় ঘােষণা করেছিলেন সিল্যান্ডের সংবিধান। তৈরি হয়েছিল জাতীয় সংগীত।
সিল্যান্ড দখল করতে চেয়েছিল জার্মানরাওঃ
সত্তরের দশকে কিছু জার্মান ও বেলজিয়ান ব্যবসায়ীর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন মেজর বেটস। ব্যবসায়ী দলটির নেতা ছিলেন জার্মান হিরে ব্যবসায়ী আলেকজান্ডার আখেনবাখ। ঠিক হয়েছিল সিল্যান্ডের ওপর বানানাে হবে আন্তর্জাতিক মানের ক্যাসিনাে, হােটেল ও একটি তৈলশােধনাগার। চুক্তিতে সই করার জন্য ১৯৭৮ সালের আগস্টে অস্ট্রিয়া গিয়েছিলেন মেজর বেটস ও স্ত্রী জোয়ান। সিল্যান্ডের আকাশে ঘনিয়েছিল দুর্যোগের ঘনঘটা। বেটস দম্পতির অনুপস্থিতির সুযােগে সিল্যান্ডের হেলিপ্যাডে নেমেছিল একটি হেলিকপ্টার। কপ্টারটিতে ছিলেন বেশ কয়েকজন জার্মান সমাজবিরােধী। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন হিরে ব্যবসায়ী আখেনবাখের আইনজীবী জারনট পুজ। মেজরের পুত্র মাইকেল তখন একা ছিলেন সিল্যান্ডে। বাধা দেবার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু মাইকেলকে হাত পা বেঁধে একটি ঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। কিছুদিন পর দখলকারীরা একটি বােটে চাপিয়ে মাইকেলকে পাঠিয়ে দিয়েছিল নেদারল্যান্ড। নেদারল্যান্ড থেকে মাইকেল মেজর বেটসকে জানিয়েছিলেন বিশ্বাসঘাতক আখেনবাখ দখল করে নিয়েছেন সিল্যান্ড’।
মেজরের শিরা উপশিরায় ফুটতে শুরু করেছিল বদলার আগুনঃ
জার্মানদের বিশ্বাসঘাতকতার বদলা নেওয়ার শপথ নিয়েছিলেন মেজর বেটস। কিছু কম্যান্ডাে বন্ধুকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এক দুঃসাহসী মিশনে। জোগাড় করেছিলেন অত্যাধুনিক রাইফেল ও একটি হেলিকপ্টার। পাইলট হিসেবে নিয়েছিলেন জেমস বন্ডের ছবিতে স্টান্ট পাইলট হিসেবে কাজ করা এক বন্ধুকে। কয়েকদিন পর খুব ভােরে সিল্যান্ডের আকাশে দেখা দিয়েছিল হেলিকপ্টার। দড়ি বেয়ে একে একে সিল্যান্ডের হেলিপ্যাডে নেমেছিলেন প্রশিক্ষিত কম্যান্ডােরা। অপ্রস্তুত জার্মানরা কম্যান্ডােদের সাথে বন্দুক যুদ্ধে টিকতে পারেনি। আত্মসমর্পণ করেছিল কিছুক্ষণের মধ্যেই। মেজর বেটস হাসতে হাসতে জার্মানদের বলেছিলেন ” আমি ঘাস ছিড়তে আর্মিতে আসিনি ” সিল্যান্ডে বসেছিল বিচার সভা। সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হলেও প্রতারনার অভিযােগে আটকে রাখা হয়েছিল বিশ্বাসঘাতক আখেনবাখের আইনজীবী পুজকে। ফাইন করা হয়েছিল ৭৫০০০ ডয়েশ মার্ক। আটক থাকা অবস্থায় জার্মান আইনজীবীকে দেওয়া হয়েছিল টয়লেট সাফ ও কফি বানানাের কাজ। সিল্যান্ডে বন্দি থাকা নাগরিককে উদ্ধারের জন্য জার্মানি অনুরােধ করেছিল ব্রিটেনকে। ব্রিটেন জানিয়েছিল সিল্যান্ড তাদের এলাকার মধ্যে নয়। তাই ব্রিটেন কিছু করতে পারবে না। এরপর জার্মানি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সিল্যান্ডে পাঠিয়েছিল ডঃ নেইমােলারকে। সিল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছিল জার্মানি। বন্দি হওয়ার ছ’সপ্তাহ পরে ছাড়া পেয়েছিলেন আইনজীবী পুজ। সেই প্রথম। সিল্যান্ড, একটি বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক চুক্তিতে সই করেছিল। এর পর সর্বক্ষণের নিরাপত্তারক্ষী নিয়ােগ করেছিলেন মেজর বেটস। সিল্যান্ড পাহারা দেওয়ার জন্য। জলসীমা বাড়িয়েছিল ইংল্যান্ড ইংল্যান্ডঃ দেশের জলসীমা ৯ মাইল বাড়িয়ে দিয়েছিল ১৯৮৭ সালে। ইংল্যান্ডের জলসীমার মধ্যে ঢুকে পড়েছিল সিল্যান্ড। চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিলেন মেজর বেটস। সিল্যান্ডের জলসীমা চার দিকে ১২ মাইল করে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ফলে ইংল্যান্ডের জলসীমা এমনকি ইপসউইচ শহর ঢুকে গিয়েছিল সিল্যান্ডের সীমানার ভেতর। তাই মেজর বেটসকে আর ঘাঁটায়নি ইংল্যান্ড। নিজের মতাে থাকতে দিয়েছিল রাফস টাওয়ারে। সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দাবী করলেও বিশ্বের কোনও সার্বভৌম রাষ্ট্র সিল্যান্ডকে রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়নি। ২০১২ সালে প্রয়াত হয়েছিলেন রয় বেটস , ২০১৬ সালে চলে গিয়েছিলেন স্ত্রী জোয়ানও। তবে দেশটি আজও রয়ে গিয়েছে বেটস পরিবারের দখলে। সিল্যান্ডের বর্তমান যুবরাজ মেজর বেটসের পুত্র মাইকেল। আজ সিল্যান্ডের আছে নিজস্ব ডলার ও স্ট্যাম্প। ছিল পাসপাের্টও , কিন্তু বিভিন্ন দেশের বিরােধিতার কারণে , ১৯৯৭ সালে পাসপাের্ট উঠিয়ে দিতে হয়েছিল। সিল্যান্ডের আছে নিজস্ব ফুটবল টিম। দেশ যেহেতু জলে ভাসে তাই ফুটবল টিমটি খেলে ডেনমার্কের লিগে।
ট্যুরিস্ট ভিসা দেয় সিল্যান্ডঃ ভিসা পাওয়ার পর হারউইচ বন্দর থেকে সিল্যান্ডের নিজস্ব বােটে চেপে পৌঁছাতে হবে রাফস টাওয়ারের নীচে। ওপর থেকে নেমে আসবে দড়ি বাঁধা দোলনা। দোলনা চেপে উঠতে হবে সিল্যান্ড দেশে। ডেকের ওপর থাকা বাড়িটি বাইরে থেকে দেখতে ভালাে না হলেও ভেতরটা বেশ সাজানাে গােছানাে। বাড়িটিতে আছে অনেকগুলি কক্ষ, মিউজিয়াম, লাইব্রেরি, কফি – শপ ও স্মারক বিক্রির দোকান।
সিল্যান্ডের গঠনঃ সিল্যান্ডের এই অবকাঠামােটি আসলে গড়ে উঠেছে একটি বিশাল ডুবন্ত জাহাজের উপরে। ১৯৪২ সালে প্রথমে একটি ফেরির ন্যায় বিশাল ভাসমান সমতল জাহাজ নেওয়া হয়। এরপর এর উপরে পাটাতন যুক্ত দুটি কংক্রিটের ফাঁপা টাওয়ার যুক্ত করা হয়, যাতে এর উপরে অন্যান্য কাঠামাে তৈরি করা যায়। এই দুই টাওয়ারের প্রতিটি ছিল মােট সাত তলা করে। এগুলাে খাবার ও ঘুমানাের ঘর, গুদাম ঘর ও নানা যুদ্ধোপকরণ রাখার কাজে ব্যবহৃত হতাে। এর নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর তিনটি টাগবােটের সাহায্যে একে ‘রাফ স্টান্ড’ বালুতটে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে নিয়ে আসার পর এটির সেই বিশাল সমতল জাহাজটিকে পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। ফলে সেটি উপরের গােটা কাঠামাের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। উপরে সমস্ত কাঠামাের ক্ষেত্রফল ১৫ গজ X ৪০ গজ।সিল্যান্ডের জাতীয় নীতিবাক্য “E Mare Libertas” অনুসারে, যার অর্থ, “সমুদ্র হতেস্বাধীনতা”। বর্তমানে সিল্যান্ডে বাস করেন ২৭ জন নাগরিক। টিনের খাবারের ওপরই ভরসা করতে হয় তাঁদের। আজও সিল্যান্ড ও তার নাগরিকদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অ্যাটল্যান্টিকের হাড়কাঁপানাে ঝােড়াে হাওয়া, আক্রমণের আশঙ্কা ও রাইফেল। সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তিপান্ন বছর ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে স্বীকৃতিহীন’ সিল্যান্ড’। তাই হয়তাে বৃটিশ পর্বতারােহী কেন্টন কুল , এভারেস্ট শৃঙ্গে আরােহণ করার পর উড়িয়ে দিয়েছিলেন সিল্যান্ডের জাতীয় পতাকা। সিল্যান্ডের লড়াইকে কুর্নিশ জানাতে।